How to Perform Salah | নামাজের ভিতর ৫১টি সুন্নত | sunnah prayers

নামাজের ভিতর ৫১টি সুন্নত

  


         নামাজ পড়া ফরজ

যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে নামাজ পড়ার এখতিয়ার কারো নেই। 

রাসুল (সা.) বলেছেন, "তোমরা আমার মতো নামাজ পড়ো।"


নামাজের প্রকৃত ফজিলত পেতে হলে অবশ্যই রাসুল (সা.)-এর পদ্ধতি অনুযায়ী নামাজ পড়তে হবে।





নামাজের ভিতর ৫১টি সুন্নত রয়েছে।


দাঁড়ানো অবস্থায় ১১টি সুন্নত,
কেরাত পড়ার ৭টি সুন্নত, 
রুকু এর ৮টি সুন্নত, 
সিজদাহ্ এর ১২টি সুন্নত,
নামাজের বৈঠকে ১৩টি সুন্নত। 


নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় ১১টি সুন্নত

(১) উভয় পায়ের আঙুলগুলো কিবলামুখী করে রাখা এবং উভয় পায়ের মাঝখানে চার আঙুল, ঊর্ধ্বে এক বিঘত পরিমাণ ফাঁক রাখা। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৭৩)


(২) তাকবিরে তাহরিমার সময় চেহারা কিবলার দিকে রেখে নজর সিজদার জায়গায় রাখা এবং হাত ওঠানোর সময় মাথা না ঝুঁকানো, মাথা ও সিনা পুরোপুরি সোজা রাখা। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী:১/৭৩)

(৩) মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমা ইমামের তাকবীরের সাথে  বলা।  তবে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে  হবে, যেন মুক্তাদীর তাকবির ইমামের তাকবীরের আগে শেষ না হয়।  ইমামের তাকবীরের আগে মুক্তাদীর তাকবীর শেষ হলে মুক্তাদীর নামাজ হবে না (নুরুল ইযাহ: ৫০)

(৪)তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা কানের লতি পর্যন্ত ওঠানো। 
(মুসলিম শরীফ: ৫৮৯, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৭৩)


(৫) হাত ওঠানোর সময় আঙুলগুলো ও হাতের তালু কিবলামুখী রাখা। 
(তিরমিযী শরীফ:১/৫৬)


(৬) আঙুলগুলো স্বাভাবিক রাখা। অর্থাৎ একেবারে মিলিয়ে না রাখা, আবার বেশি ফাঁক ফাঁক করেও না রাখা। 
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৭৩)

(৭) হাত বাঁধার সময় ডান হাতের তালু বাঁম হাতের পিঠের (পাতার) ওপর রাখা। 
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৭৩)


(৮) ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে বাঁম হাতের কব্জি ধরা। 
(মারাকিউল ফালাহ: ২০৮)

(৯) অবশিষ্ট তিন আঙুল বাঁম হাতের ওপর স্বাভাবিকভাবে বিছিয়ে রাখা। 
(ফাতহুল ক্বদীর: ১/২৫০)


(১০) নাভির নিচে হাত বাঁধা। 
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৭৩)


(১১) ছানা পড়া।
(আবু দাউদ শরীফ: ৬৫৭)


(বুখারি, হাদিস : ৭৩৪, ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/৭৩, তিরমিজি হাদিস : ৩০৪, ২৫২,
নাসায়ি হাদিস : ৮৯২, মুস্তাদরাক : ১৭৬১, ৮৫৬, মুসলিম হাদিস : ৩৯১, আবু দাউদ হাদিস : ৭২৬, ৭৫৬, ৭৭৫, ফাতহুল কাদির : ১/২৫০)



নামাজে কেরাত পড়ার ৭টি সুন্নত

(১) প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর পূর্ণ আউজুবিল্লাহ (আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম) পড়া।
(দারাকুতনী: ১১৫৪)


(২) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়া। 
(মুসলিম শরীফ:৬০৬)


(৩) সুরাহ্ ফাতিহা এর প্রত্যেক আয়াত শেষে থামা এবং আস্তে আমিন বলা (" আ" তে টান দেওয়া) 
(মারাকিউল ফালাহ: ২১১)

(৪) ফজর এবং জোহর নামাজে সুরাহ হুজরাত থেকে সুরাহ বুরুজ পর্যন্ত যে কোন একটি সুরাহ পড়া।


জুম্মার দিন ফজর নামাজে প্রথম রাকাআতে সুরাহ আলিফ লাম মিম সিজদা এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সুরা দাহার পড়া


জুম্মার নামাজে সুরাহ মুনাফিকুন, সুরাহ আলা, সুরাহ গাশিয়া (যে কোন একটি সুরাহ পড়া)  আছর এবং ইশা নামাজে সুরাহ ত্বরেক থেকে সুরাহ লাম ইয়াকুন পর্যন্ত মাগরিবের নামাজে সুরাহ লাম ইয়াকুন থেকে শুরু করে সুরাহ নাস পর্যন্ত যে কোন একটি সুরাহ পড়া।   (ইলাউস সুনান: ৪/৩১)


(৫) ফজর নামাজে  প্রথম রাকাআতে কেরাত দ্বিতীয় রাকাআত এর  কেরাতের চাইতে লম্বা পড়া। 
অন্যান্য নামাজে উভয় কেরাত সমান পড়া। 
(ইলাউস সুনান: ৪/২১)


(৬) কেরাত মধ্যেম গতিতে পড়া (খুব বেশি তাড়াতাড়ি অথবা ধীর গতিতে নয়)
(ইবনে কাছীর: ৪/৪৬৩)


(৭) প্রত্যেক ফরজ নামাজে তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকাআতে শুধুই সুরাহ ফাতিহা পড়া। 
(মারাকিউল ফালাহ:২১৫)

(বুখারি, হাদিস : ৭৭৬, ৭৮০, মুসলিম হাদিস : ৭৩৩,ইবনে মাজাহ হাদিস : ৮০৪
আত্ তিরমিজি, হাদিস : ৮৯৮ ,আবু দাউদ হাদিস : ৭৬৪, ৭৭৬)



রুকু এর ৮টি সুন্নত

(১) তাকবির বলা (বলতে বলতে)অবস্থায় রুকুতে যাওয়া।
(বুখারী শরীফ: ৬৯৩, মুসলিম শরীফ: ১/১৬৯)


(২) পুরুষের জন্য উভয় হাতের আঙ্গুল দ্বারা হাঁটু ধরা। 
(বুখারী শরীফ: ১/১০৯, ৭৪৮)


(৩)রুকুরত অবস্থায় হাতের আঙুলগুলো ফাঁক করে ছড়িয়ে রাখা। 
(ইলাউস সুনান: ৪/৩১)


(৪) উভয় হাত সম্পূর্ণ সোজা রাখা, কনুই বাঁকা না করা। 
(মিশকাত শরীফ: ১/৭৬)

(৫) পায়ের গোছা, হাঁটু ও ঊরু সম্পূর্ণ সোজা রাখা। হাঁটু সামনের দিকে  বা পিছনে বাঁকা না করা। 
(মারাকিউল ফালাহ: ২১৫)


(৬) মাথা, পিঠ, নিতম্ব ও কোমর সমান বা সোজা রাখা এবং পায়ের দিকে নজর রাখা। 
(বুখারী শরীফ: ১/১০৯)


(৭) রুকুতে কমপক্ষে তিনবার রুকুর তাসবিহ পড়া।
(মুসলিম শরীফ: ১২৯১)


(৮) রুকু থেকে ওঠার সময় ইমামের ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’, মোক্তাদির ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ এবং একাকী নামাজ আদায়কারীর উভয়টি বলা। 
(বুখারী শরীফ: ৬৮০,৭৫৪)

(বুখারি, হাদিস : ৭৮৯, ৭৯০, ৮২৮, আবু দাউদ, হাদিস : ৭৩১, ৭৩৪, ৮৬৩,
ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১২)


সিজদা এর ১২টি সুন্নত
(১) তাকবির বলা অবস্থায় সিজদায় যাওয়া। 
(মুসলিম শরীফ: ১/১৬৯)


(২) উভয় হাটু প্রথমে মাটিতে রাখা। 
(তিরমিযী শরীফ: ১/৬১)


(৩) হাঁটু থেকে আনুমানিক এক হাত দূরে উভয় হাত রাখা এবং হাতের আঙুলগুলো কিবলামুখী করে সম্পূর্ণরূপে মিলিয়ে রাখা। কান হাতের তালুর কাছাকাছি রাখা যেন কান থেকে কিছু পড়লে হাতের পিঠে পড়ে। 
(ইলাউস সুনান: ৩/১৩)

(৪) উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা বরাবর নাক রাখা।
(মারাকিউল ফালাহ: ২১৬)


(৫) তারপর কপাল রাখা । 
(ইলাউস সুনান: ২১৬)


(৬) দুই হাতের মাঝে সিজদা করা এবং দৃষ্টি নাকের অগ্রভাগের দিকে রাখা। 
(মারাকিউল ফালাহ: ২১৬)


(৭) সিজদায় পেট ঊরু থেকে পৃথক রাখা। 
(বুখারী শররফ: ১/৫৬, ৩৩০০)


(৮) উভয় বাহু পাঁজর থেকে পৃথক রাখা। 
(বুখারী শরীফ: ১/৫৬)

(৯) উভয় হাতের কনুই মাটি ও হাঁটু থেকে পৃথক রাখা। 
(মুসলিম শরীফ: ৭৬৩)


(১০) সিজদায় কমপক্ষে তিনবার সিজদার তাসবিহ পড়া। 
(অাবু দাউদ শরীফ: ৭৫২)


(১১) তাকবির বলা অবস্থায় সিজদা থেকে ওঠা।
(বুখারী শরীফ: ৭৪৬)


(১২) সিজদাহ্ থেকে উঠার সময় প্রথমে কপাল এরপর নাক এরপর হাত তারপর হাঁটু উঠানো। 
(মারাকিউল ফালাহ: ২১৬)


(বুখারি, হাদিস : ৮০৩, ৮০৭, ৮২২, ৮২৫, মুসলিম হাদিস : ৪০১,
 মুসনাদে আহমাদ হাদিস : ২৩৬৬২, ১৮৮৮২, ১৮৮৮০)


নামাজে বৈঠকে ১৩টি সুন্নত

(১) বাঁম পা বিছিয়ে তার ওপর বসা। ডান পা সোজাভাবে খাড়া রাখা। উভয় পায়ের আঙুলগুলো সাধ্যমতো কিবলার দিকে মুড়িয়ে রাখা।
(বুখারী শরীফ: ৭৮৫)


(২) উভয় হাত রানের ওপর হাঁটু বরাবর রাখা এবং দৃষ্টি দুই হাঁটুর মাঝ বরাবর রাখা। 
(মুসলিম শরীফ: ৯১১)

(৩) ‘আশহাদু’ বলার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা একসঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার বৃত্ত বানানো এবং অনামিকা ও কনিষ্ঠাঙ্গুলিদ্বয় মুড়িয়ে রাখা এবং ‘লা ইলাহা’ বলার সময় শাহাদাত আঙুল সামান্য উঁচু করে ইশারা করা। অতঃপর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙুলের মাথা সামান্য ঝুঁকানো। হাঁটুর সঙ্গে না লাগানো। 
(ফাতাওয়ায়ে শামী: ১/৪৭৬)


(৪) আখেরি বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়ার পর দুরুদ শরিফ পড়া৷
(ইবনে মাজাহ শরীফ: ৬৫)

(৫) দুরুদ শরিফ এরপর দোয়া মাছুরা পড়া।
(ইবনে মাজাহ শরীফ: ৬৫)


(৬) উভয় দিকে সালাম ফিরানো । 
(আবু দাউদ শরীফ: ৮৪৫)


(৭)  ডান দিকে সালাম ফিরানো। (চেহারা কিবলার দিকে মুখ করে রেখে  "আস্ সালামু আলাইকুম" বলা এবং "ওয়ারহমাতুল্লাহ" বলার সময় ডান দিকে চেহারা ঘুরানো) দৃষ্টি কাঁধের দিকে রাখা।
(তিরমিযী শরীফ:  ২৭৩)

(৮) ইমামের উভয় সালামে মোক্তাদি, ফেরেশতা ও নামাজি জিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। 
(দুররুল মুখতার: ১/৭৮)


(৯) মোক্তাদিদের উভয় সালামে ইমাম, অন্যান্য মুসল্লি, ফেরেশতা ও নামাজি জিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। 
(আল বাহরুর রায়েক: ১/৩৩২)


(১০) একাকী নামাজি ব্যক্তি শুধু ফেরেশতাদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। 
(দুররুল মুখতার: ১/৭৯)

(১১) মোক্তাদিদের ইমামের সালাম ফেরানোর পরপরই সালাম ফেরানো।
(রদ্দুল মুহতার: ১/৪৭৭)


(১২) দ্বিতীয় সালাম প্রথম সালাম এর চাইতে আস্তে বলা। (দ্বিতীয় সালাম এর নিয়ম, প্রথম সালাম ফিরিয়ে চেহারা আবার কিবলা মুখি করে    "আস্ সালামু আলাইকুম" বলা এবং "ওয়ারহমাতুল্লাহ" বলার সময় বাঁম দিকে চেহারা ঘুরানো) 
(হিন্দিয়া:১/৭৬)


(১৩) ইমামের দ্বিতীয় সালাম ফেরানো শেষ হলে মাসবুকের ছুটে যাওয়া নামাজ আদায়ের জন্য দাঁড়ানো।
(রদ্দুল মুহতার: ১/৫৯৮)


(বুখারি, হাদিস : ৮৩৪, ৮৩৮, মুসলিম, হাদিস : ৫৮২, ৪৩১, নাসায়ি, হাদিস : ১১৫৮, 
আবু দাউদ, হাদিস : ৭২৬, তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৭, মুসান্নাফ, হাদিস : ৩১৪৯, ৩১৪০, ৩১৫৬)